• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

নওগাঁর শিব নদের বুকে এখন সবুজের সমারোহ 

  • ''
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০২৪

নওগাঁ প্রতিনিধি:

মান্দায় এক সময়ের খরস্রোতা শিব নদ নাব্যসংকটে আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। শিব নদের বুক জুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। এ যেন সবুজের গালিচায় ঢাকা পুরো শস্য মাঠ। শুধু বোরো ধান নয় রবিশস্য হিসেবে আলু, সরিষাসহ বিভিন্ন শস্যের চাষ হয় এই নদের জেগে ওঠা চরে।

এলাকার প্রবীণদের তথ্যমতে, নওগাঁর মান্দা উপজেলার বৌদ্দিপুর এলাকায় আত্রাই নদের একটি শাখা বের হয়ে এই শিব নদে নাম ধারণ করে। এক সময় শিব নদ মান্দার অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করত। নাটোরের সিংড়া, পাবনার ঈশ্বরদী, চাটমোহর থেকে বড় বড় সব নৌকা মান্দার চৌবাড়িয়াহাট  নিয়ামতপুর উপজেলার গাবতলি ও ছাতড়া হাট  ধান কেনার জন্য আসত। মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়াহাট, ঠাকুর মান্দা ও নিয়ামতপুর উপজেলার গাবতলীহাট ও ছাতড়াহাটতে  নদীর পাড় জুড়ে থাকত ধান কেনার নৌকা বহর। বড় বড় ধান ব্যাপারীর সমাগম ঘটত এসব হাটবাজারে। দেশি মাছের অভয়াশ্রম ছিল এই শিব নদ। 

শিব নদের পাড়ের প্রবীণ ব্যক্তি মো. রইচ উদ্দিন সরদারসহ আরোও অনেকে বলেন, শিব নদ এক সময় খরস্রোতা নদী ছিল। আমরা নৌকায় যাতায়াত করতাম। শালুক, পদ্মসহ নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ যেমন ছিল তেমন ছিল বিভিন্ন জাতের মাছ। এখন নদের নাব্য নেই। পানিও নেই। জেগে ওঠা চরে হচ্ছে চাষবাস। আর আগের দিনের সেই বাটক্যা, নয়না, দাঁড়ি, কাঁটাপাতাশি, গজাড় মাছও এখন দেখা যায় না। শিব নদটি খনন খুব জরুরি। 

বিলকুমারী সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, ১৯৭৬-এর পরে নদটি আর খনন করা হয়নি। তাই দিন দিন নদটি ভরাট হচ্ছে। এখন নদের বুক জুড়ে চাষ হচ্ছে ধান। আমরা নদটি খননের জন্য মানববন্ধনসহ স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত আবেদন করেছিলাম।

বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মতিউর রহমান জানান, নদটি খননের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি এবং নদের পাশে একটি ইকো পার্ক নির্মাণের জন্য পরিদর্শক দলও নদ পরিদর্শন করেছিলেন এবং একটু সময়ের ব্যাপার। তবে
তিনি আরও জানান,  নদীর দুই পাড়ে জেগে ওঠা চরে ফসল খুবই ভালো হয়।  কারণ বন্যার পরে পলিমাটি পড়ায় জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সার ও কীটনাশক কম লাগে। ফলনও অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি হয়। নদটি খনন হলে চাষাবাদের জন্য সেচ সুবিধা ও মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের বোরো চলতি মৌসুমে জেলায়  ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিব নদ (চৌবাড়িয়া থেকে শিব নদী (ঠাকুর মান্দা বিল)  জুড়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। 

এ নিয়ে জেলা কৃষি উপপরিচালক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বন্যা পরবর্তী মাটিতে পলি পড়ায় এখানে ফসলের আবাদ খুব ভালো হয়। তাছাড়া এখানে বছরে একটি ফলন হওয়ায় বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ ফলন হয়ে থাকে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) গোলাম মওলা বলেন, শিব নদের বুক জুড়ে সবুজের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মন ভরে যায়। এই নদের বুক জুড়ে উৎপাদিত ফসল জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। আর শিব নদ খননের ব্যাপারে নওগাঁ  ৪৯, মান্দা ৪ আসনের সাংসদ সদস্য মোহাম্মদ ব্রহানী সুলতান মাহমুদ গামা মহান সাংসদে শিব নদ খননের বিল উত্থাপন করেছেন এবং বিল পাশ হলেই  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads